ঢাকা,শুক্রবার, ১৫ নভেম্বর ২০২৪

অরক্ষিত বেড়িবাঁধ ঝুঁকিতে পেকুয়ার ৭ গ্রামের মানুষ

ছোটন কান্তি নাথ, চকরিয়া ::

পেকুয়ার মগনামা ইউনিয়নের কাঁকপাড়া বেড়িবাঁধের ৫০০ মিটার অংশ চরম ঝুঁকিতে রয়েছে। এতে মগনামা ইউনিয়নের দক্ষিণ ও পশ্চিমাংশের পানি উন্নয়ন বোর্ডের বেড়িবাঁধ বিলীন হয়ে গেছে সাগরে। এ অবস্থায় আতঙ্কে রয়েছেন মগনামা ও উজানটিয়া ইউনিয়নের কাঁকপাড়াসহ আশপাশের সাত গ্রামের অন্তত ৫০ হাজার মানুষ। চলতি বর্ষা মৌসুমে টানা বর্ষণ শুরু হওয়ার আগেই অরক্ষিত বেড়িবাঁধটি টেকসইভাবে নির্মাণের দাবি জানিয়েছেন তাঁরা।

এদিকে আতঙ্কিত বাসিন্দাদের দুঃখ-দুর্দশার কথা চিন্তা করে ইতোমধ্যে অরক্ষিত বেড়িবাঁধের কিছু অংশ ব্যক্তিগত উদ্যোগে মেরামতের কাজ শুরু করেছেন মগনামা ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মো. শরাফত উল্লাহ ওয়াসিম। তাঁর এই উদ্যোগে কিছুটা হলেও স্বস্তি দেখা দিয়েছে জনমনে।

সংশ্লিষ্টরা জানান, পেকুয়া উপজেলার মগনামা ইউনিয়নের কাঁকপাড়ায় ৪০০ মিটার এলাকায় বেড়িবাঁধ অরক্ষিত থাকায় মগনামা ও উজানটিয়া ইউনিয়নের অন্তত সাত গ্রামের প্রায় ৫০ হাজার মানুষ আতঙ্কে রয়েছেন। সমুদ্রের প্রচণ্ড ঢেউয়ের তোড়ে পানি উন্নয়ন বোর্ড বান্দরবান নিয়ন্ত্রিত বেড়িবাঁধের ওই পয়েন্ট সম্পূর্ণভাবে সাগরবক্ষে বিলীন হয়ে গেছে। এতে কাঁকপাড়া এলাকার একজন আধ্যাত্মিক ব্যক্তির মাজার এবং স্কুল কাম সাইক্লোন শেল্টারটি সাগরে তলিয়ে যাওয়ার উপক্রম হয়েছে।

বাসিন্দারা জানান, গত কয়েকবছরে বেড়িবাঁধের ওই অংশ মারাত্মক ঝুঁকির মুখে পড়ায় প্রায় ৫০০ মিটার বেড়িবাঁধ সাগরে বিলীন হয়ে যায়। এতে সেখান দিয়ে হু হু করে লোকালয়ে প্রবেশ করে সাগরের লবণাক্ত পানি। এ অবস্থায় বিগত কয়েকটি ভয়াবহ বন্যায় মগনামা ও উজানটিয়া ইউনিয়ন ব্যাপকভাবে প্লাবিত হওয়ায় কোটি কোটি টাকার সম্পদের ক্ষতি হয়। বেড়িবাঁধের বিলীন অংশ দিয়ে জোয়ারের পানি লোকালয়ে প্রবেশ করায় দুই ইউনিয়নের হাজার হাজার মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছিল। গ্রামীণ অবকাঠামো, পুকুর, বসতবাড়ি, রাস্তাঘাট ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান পানিতে তলিয়ে যায়।

তবে পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) কর্মকর্তারা বলছেন, মগনামা ইউনিয়নে পানি উন্নয়ন বোর্ড নিয়ন্ত্রিত বেড়িবাঁধের সংস্কার কাজ চলমান রয়েছে। মগনামার পশ্চিমাংশ কুতুবদিয়া চ্যানেল সংশ্লিষ্ট বেড়িবাঁধ নির্মাণকাজও চলছে। কাঁকপাড়া থেকে শরেঘানা পর্যন্ত বেড়িবাঁধ নির্মাণের কাজ পুরোপুরি শেষ করা যায়নি। পাউবো শরেঘানা থেকে চরকানাই পর্যন্ত বেড়িবাঁধের মাটি ভরাটের কাজ সম্পন্ন হয়েছে। হুমায়ুন চৌধুরীর চিংড়ি প্রকল্প থেকে মগনামা জেটিঘাট পর্যন্ত বাঁধের মাটি ভরাট সম্পন্ন হয়েছে। একইভাবে জেটিঘাট থেকে চেপ্টাখালী নাশি পর্যন্ত মাটি ভরাটকাজ বাস্তবায়ন করা হয়। জালিয়াপাড়া, ঢলন্যাপাড়ার দক্ষিণাংশ পর্যন্ত বেড়িবাঁধের মাটি ভরাট করা হয় অনেক আগেই। এসব বেড়িবাঁধ যাতে টেকসইভাবে নির্মিত হয় সেজন্য পাউবো কর্মকর্তারা তৎপর রয়েছেন। অপরদিকে কাঁকপাড়ার উত্তরাংশ থেকে দক্ষিণাংশে মাজারের দক্ষিণ দিক পর্যন্ত বেড়িবাঁধ অরক্ষিত থাকার বিষয়টি তাঁদের নজরে রয়েছে।

কর্মকর্তারা আশা করছেন, এবারের লাগাতার বর্ষা মৌসুম শুরুর আগেই অরক্ষিত অংশের কাজ সমাপ্ত করা হবে।

স্থানীয় রমিজ উদ্দিন, আশেক আহমদসহ বেশ কয়েকজন ভুক্তভোগী বলেন, কাঁকপাড়া অংশের প্রায় ৪২ চেইন বেড়িবাঁধ মারাত্মক ঝুঁকিতে রয়েছে। শেখ আবদুল আজিজ চৌধুরী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের উত্তরাংশ থেকে দক্ষিণাংশে মাজারের কিছুদূর পর্যন্ত বেড়িবাঁধ সাগরের সঙ্গে মিতালী করছে। এখানে যে বেড়িবাঁধ ছিল সেই নিশানা পর্যন্ত মুছে গেছে।

জনগণের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে সম্প্রতি অরক্ষিত বেড়িবাঁধ পরিদর্শন করেছেন মগনামা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শরাফত উল্লাহ ওয়াসিম। তিনি এ সময় সামুদ্রিক জোয়ারের পানি ঠেকাতে নিজ খরচে আপাতত রিংবাঁধ নির্মাণের উদ্যোগ নেন। এর আগেও গত দুই বছর তিনি সেখানে রিংবাঁধ নির্মাণ করে আসছিলেন।

এ প্রসঙ্গে চেয়ারম্যান শরাফত উল্লাহ ওয়াসিম বলেন, ‘কাঁকপাড়ার বেড়িবাঁধ রক্ষায় প্রতিবছর লাখ লাখ টাকা ব্যয় করা হলেও কাজের কাজ কিছুই হচ্ছে না।

অরক্ষিত বেড়িবাঁধ যাতে এবার টেকসইভাবে নির্মাণ করা হয় সেজন্য পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা হয়েছে। আপাতত আমার ব্যক্তিগত পক্ষ থেকে সেখানে রিংবাঁধ নির্মাণ করা হচ্ছে।’

এ ব্যাপারে পানি উন্নয়ন বোর্ড বান্দরবানের শাখা কর্মকর্তা (এসও) গিয়াস উদ্দিন জানান, মগনামার কাঁকপাড়া পয়েন্টে টেকসইভাবে

বেড়িবাঁধ নির্মাণের জন্য দরপত্র আহ্বানের পর ঠিকাদারকে কার্যাদেশ দেওয়া হয়েছে। অতিদ্রুত এই কাজ শুরু করার জন্য আমাদের পক্ষ থেকে তাগাদা দেওয়া হচ্ছে। আশা করছি, লাগাতার বর্ষা শুরুর আগেই এই বেড়িবাঁধের কাজ সম্পন্ন হবে।

পাঠকের মতামত: